ঢাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: শুক্রবার , ২১ নভেম্বর , ২০২৫
রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় অনুভূত ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হওয়া এই কম্পনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ভবনে ফাটল দেখা দেয়। আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা দৌড়ে হল ত্যাগ করেন, অনেকে মাঠ ও খোলা স্থানে আশ্রয় নেন। এ সময় লাফিয়ে নামতে গিয়ে অন্তত চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের দুই শিক্ষার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের দুই শিক্ষার্থী লাফিয়ে নামার সময় হাতে-পায়ে আঘাত পান। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কবি জসীম উদদীন হলের ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামিম সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
হঠাৎ ভূমিকম্পে হলে সৃষ্টি হওয়া আতঙ্কের বর্ণনা দিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান উদ্দিন বলেন, “কাপড় ধুচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি শরীর দুলছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কী করব বুঝতে পারছিলাম না।” গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহেদুল আলম বলেন, “ঘুম থেকে উঠে দেখি ফ্যান দুলছে। এমন শক্ত ভূমিকম্প জীবনে প্রথম অনুভব করলাম। মনে হচ্ছিল ভবন ভেঙে পড়বে।”
ভূমিকম্পে ঢাবির বেশ কয়েকটি হলে দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্যার এ এফ রহমান হলের ১০৫ নম্বর কক্ষের আসবাবপত্র ভেঙে পড়ে। কাপবোর্ড ও বুকশেলফের সামগ্রী ছিটকে পড়ে যায়। তবে কেউ আহত হননি।
শামসুন নাহার হলের একটি ভবনের মিড বিল্ডিং অংশে বড় ফাটল দেখা গেছে। বারান্দার বেশ কিছু অংশ ফাঁকা হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কবি জসীম উদদীন হলে দক্ষিণ ভবনের তৃতীয় তলার পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। শিক্ষার্থীরা জানান, ভবনের দুটি অংশের সংযোগস্থল পূর্বে নতুন পলেস্তারা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল; ভূমিকম্পে সেই অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, খন্দকার মোকাররম ভবন, শেখ ফজলুল হক মুসলিম হলসহ একাধিক স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে।
তবে মাস্টার দা সূর্য সেন হল, বিজয় একাত্তর হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা ছাদ, বারান্দা ও কক্ষ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। অনেকের ভাষ্য, ভবনের পুরোনো অবস্থা দেখে ভেঙে পড়ার আশঙ্কাই আতঙ্ক তৈরি করে। হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি ও চিৎকারে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “কম্পন শুরু হতেই কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাদ থেকে লাফ দেয়। তারা ভয় পেয়ে বুঝতে পারেনি সিঁড়ি দিয়ে নামা নিরাপদ ছিল।”
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত সকল হল ও ভবন পরিদর্শনের প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রকৌশল শাখাকে জরুরি ভিত্তিতে স্থাপনার নিরাপত্তা মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক দূর করতে দ্রুত পরিদর্শন করা হবে এবং যেসব ভবনে ঝুঁকি আছে সেগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভূমিকম্পের পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক শিক্ষার্থী স্বাভাবিকভাবে হলে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।