বাকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: শনিবার , ১ মার্চ , ২০২৫
বাংলাদেশের চরাঞ্চলের মাটি সাধারণত বেলে বা বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির, যার পানি ধারণ ক্ষমতা ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কম। এছাড়া সেচের সমস্যা, আকস্মিক বন্যা, খরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে চরাঞ্চলের ফসল উৎপাদনশীলতা অনেকাংশে কম। চরাঞ্চলের মাটি, জলবায়ু ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে মাথায় রেখে যমুনার চরে শস্যবিন্যাস পদ্ধতিতে গবেষণা চালিয়ে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ খায়রুল হাসানের নেতৃত্বে গবেষণা প্রকল্পের অন্য গবেষকরা হলেন পিএইচডি গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস এবং স্বাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইকরামুল হক।
জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকায় ওই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গবেষণার অংশ হিসেবে শস্যবিন্যাস পদ্ধতির মাধ্যমে যমুনার চরের একই জমিতে সারা বছরে তিন ধরনের ফসল চাষ করে প্রাথমিকভাবে সাফল্য পেয়েছেন। যা ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যমুনার চরের মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস জানান, চরাঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত সুনির্দিষ্ট শস্যবিন্যাস অনুসরণ না করে বিচ্ছিন্নভাবে ভুট্টা, মরিচ, ধনিয়া, পাট, আলু, রসুন ও রোপা আমনসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন। ফলে ফসলের উৎপাদন কম হয় এবং আকস্মিক বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গবেষণার আওতায় তিন ধরনের লাভজনক শস্যবিন্যাস নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো ভুট্টা-পাট-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি। অন্যটি আলু-পাট-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি এবং আরেকটি মরিচ-চিনাবাদাম-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি। এ শস্যবিন্যাস পদ্ধতির অনুসরণ করে আধুনিক জাত, উন্নত প্রযুক্তি এবং কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবচেয়ে লাভজনক পদ্ধতিটি চিহ্নিত করে চরাঞ্চলের চাষিদের জন্য সুপারিশ করা হবে।
প্রধান গবেষক ড. আহমেদ খায়রুল হাসান বলেন, গত দুই বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, আকস্মিক বন্যা মোকাবিলায় জলমগ্ন সহনশীল বিনাধান-১১ এবং কম বয়সি চারা ভালো ফলন দিয়েছে। ভুট্টা ও মরিচের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, গাজর, কালোজিরা, মেথি, ধনিয়া ও মটরশুঁটি চাষ করার ফলে একক ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মালচিং ও ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটের বীজ প্রাইমিং করে অঙ্কুরোদগমের হার বেড়েছে।
আগাছা দমনে আগাছানাশক ও হ্যান্ড উইডিংয়ের সমন্বিত ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এছাড়াও বারি সরিষা-১৪, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, গম, রসুন, কাউন ও সূর্যমুখীর ফলনও সন্তোষজনক ছিল।