প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: রবিবার , ২৩ নভেম্বর , ২০২৫
বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন। দীর্ঘমেয়াদে কর্তৃপক্ষ বা বাড়িওয়ালারা কী করবে—তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভূমিকম্পের মুহূর্তে আপনি কী করবেন। ইউএসজিএসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পরামর্শ অনুযায়ী সচেতনতার কয়েকটি মূল দিক নিচে তুলে ধরা হলো।
যদি ভূমিকম্পের সময় ঘরের ভেতরে থাকেন
যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। ড্রপ–কভার–হোল্ডঅন পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
টেবিল বা শক্ত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন। রান্নাঘরে থাকলে দ্রুত সরে যান।
সিঁড়িতে দৌড়াবেন না, ভবনের বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন না।
চুলা, কাচের জানালা, ভারী বুকশেলফ, আলমারি—এসব থেকে দূরে থাকুন।
কম্পন থেমে গেলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামুন এবং আশপাশে ভবন, গাছ, বৈদ্যুতিক তার নেই—এমন ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ান।
মনে রাখবেন:
২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে যারা মারা গেছেন, তাদের বেশির ভাগই ছিলেন ভবনের বাইরে। আর আহতদের বেশির ভাগ সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে বা লাফিয়ে নামতে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন।
যদি গাড়ির মধ্যে থাকেন
ধীরে গাড়ি থামিয়ে ফাঁকা জায়গায় রাখুন।
ভবন, গাছ, লাইটপোস্ট, ফ্লাইওভার বা সেতুর নিচে গাড়ি রাখবেন না।
অন্য গাড়ির চলাচলে বাধা সৃষ্টি করবেন না।
যদি পাহাড়ি এলাকায় থাকেন
পাথর গড়িয়ে পড়া, ভূমিধস বা গাছ উপড়ে পড়ার ঝুঁকি আছে কি না—খেয়াল রাখুন।
যদি সমুদ্রের কাছে থাকেন, সুনামির সতর্কতা পেলে নিরাপদ স্থানে দ্রুত সরে যান।
ভূমিকম্পের আগের প্রস্তুতি: চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ
ধাপ ১: নিজের ঘরকে নিরাপদ করুন
আলমারি, বুকশেলফ, টিভি—দেয়ালে শক্তভাবে আটকানো আছে কি না নিশ্চিত করুন।
ভারী বা কাচের জিনিস উঁচু তাকে রাখবেন না।
বিছানার পাশে বড় জিনিস রাখার অভ্যাস বাদ দিন।
ধাপ ২: জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করুন
পরিবারের সবাইকে নিয়ে একত্রিত হওয়ার জায়গা আগেই ঠিক করুন।
বাইরে থাকা কোনো আত্মীয়কে ‘জরুরি যোগাযোগ’ হিসেবে নির্ধারণ করুন।
শিশুদের জন্য স্কুল ও বাড়ি—দুই অবস্থার ভিন্ন পরিকল্পনা রাখুন।
ধাপ ৩: জরুরি সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখুন
টর্চ, ব্যাটারি, শুকনা খাবার, পানি, পাওয়ার ব্যাংক, ফার্স্ট এইড বক্সসহ একটি ব্যাগ তৈরি রাখুন।
এটি এমন জায়গায় রাখুন, যেখান থেকে দ্রুত নেওয়া যাবে।
ধাপ ৪: পরবর্তী ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি নিন
গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র একসাথে সাজিয়ে রাখুন।
বাড়ির দুর্বল অংশ মেরামত করান।
সম্ভব হলে ভূমিকম্পজনিত ক্ষতির বিমা নিয়ে ভাবুন।
বাড়িওয়ালারা কী করবেন
বাংলাদেশে বহু ভবনের নিচতলায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য খোলা কলাম রাখা থাকে—যা ভূমিকম্পে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী পরামর্শ দিয়েছেন—
এসব কলামের মধ্যে দেয়াল তোলা বা
প্রয়োজন হলে কোনাকুনি স্টিল ব্রেসিং লাগানো।
এছাড়া—গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের লাইন নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং ভবনের দুর্বল অংশ মেরামত করা জরুরি।
কর্তৃপক্ষ কী করবে
১. নগর পরিকল্পনা সঠিকভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
২. ডিএপি মান্য করা
৩. জাতীয় বিল্ডিং কোড হালনাগাদ ও কঠোরভাবে অনুসরণ
৪. সয়েল টেস্ট ছাড়া ভবন নির্মাণ না করা
৫. নিচতলার খোলা কলাম ভূমিকম্প–রোধী করা
৬. ভবনের নকশায় ভূমিকম্প বিবেচনা করা
৭. জরুরি মহড়া (ড্রিল) বাড়ানো
৮. জনগণকে সচেতন করা
৯. জলাশয় ও খোলা জায়গা ভরাট বন্ধ করা
ভূমিকম্প এড়ানো সম্ভব নয়, কিন্তু প্রস্তুতি জীবন বাঁচাতে পারে।
আপনার ঘরকে নিরাপদ করুন, পরিবারকে সচেতন করুন, জরুরি জিনিস হাতে রাখুন—এতেই ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।