প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: শনিবার , ২ আগস্ট , ২০২৫
গসিপ বা পরচর্চা—শুনতে যতই নেতিবাচক মনে হোক, এটি আসলে মানব সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘পাপ’ হিসেবে পরিচিত হলেও সামাজিক মেলবন্ধন থেকে শুরু করে বেঁচে থাকার কৌশল পর্যন্ত এর রয়েছে বিস্তৃত প্রভাব।
বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতিতেই পরচর্চার উপস্থিতি দেখা যায়। ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. নিকোল হাইজন হেস বলেন, “প্রতিটি সংস্কৃতির মানুষই তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী গসিপ করে। এটি শুধুই কারও বিরুদ্ধে বিষোদ্গার নয়, বরং সামাজিক তথ্য আদান-প্রদানের একটি উপায়।”
তার মতে, আমরা কার পোশাক পরছে, কে কী বলেছে কিংবা কে কী করেছে—এসব নিয়ে যে আলাপ করি, সেটিও গসিপের মধ্যে পড়ে। এমনকি সংবাদ প্রতিবেদন বা খেলার ফলাফল নিয়েও আলোচনা এই ধারায় পড়ে।
পরচর্চার সামাজিক ভূমিকা নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা করেছেন বিবর্তনবাদী নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক রবিন ডানবার। তার মতে, আদিম প্রাণীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে ‘অ্যালুগ্রুমিং’ নামে পরিচিত এক ধরনের আচরণ ছিল। আধুনিক মানবসমাজে গসিপ সেই একই কাজ করে—সম্পর্ক গড়ে তোলে, ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়, এমনকি কাকে বিশ্বাস করা যাবে সেই তথ্যও দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা একসঙ্গে খোশগল্প করে, তারা একে অপরের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয় এবং একে অপরের আরও কাছাকাছি চলে আসে। দলগত সহযোগিতা ও বিশ্বাস তৈরিতেও পরচর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পরচর্চার সুযোগ থাকলে মানুষ দলীয় খেলায় বেশি অংশ নিতে আগ্রহী হয়, এমনকি নিজের অর্থ ব্যয় করতেও প্রস্তুত থাকে।
তবে গসিপ সবসময় নির্দোষ নয়। ড. হেস সতর্ক করে বলেন, “নেতিবাচক গসিপ কারও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে পারে, যা তার অর্থনৈতিক সুযোগ ও জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।”
তার মতে, এটি সামাজিক নিয়ন্ত্রণেরও একটি উপায়। মানুষ অন্যের ভাবমূর্তি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিজের সুনাম রক্ষা করতে গসিপকে ব্যবহার করে।
পডকাস্টার কেলসি ম্যাককিনি বলেন, “ভালো গসিপ এমন কিছু যা এক মুহূর্তে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কোভিডের সময় আমরা বুঝেছি, গসিপ না থাকলে জীবন কতটা একঘেয়ে হতে পারত।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের জীবনের অনেক কিছু নির্ভর করে আমরা কীভাবে গল্প বলি তার ওপর। গসিপও তেমনই এক গল্প—যা মানুষকে সংযুক্ত করে, হাসায়, ভাবায় এবং মাঝে মাঝে শিক্ষাও দেয়।”
যাইহোক, গসিপের নামে পরচর্চা করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কবিরা গুনাহ হিসেবে গণ্য। পরচর্চা করা ও শোনা সমান অপরাধ। এটি মদ্যপান, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদির চেয়েও মারাত্মক ও নিকৃষ্টতম পাপ।
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কোরো না। আর তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘পরচর্চাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)।