আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: শুক্রবার , ৪ জুলাই , ২০২৫
জাপানে একটি কমিক বইয়ে আসন্ন বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণী ঘিরে ছড়িয়ে পড়া গুজব পর্যটনে প্রভাব ফেলেছে। আতঙ্কে জাপানমুখো হতে চাইছে না পর্যটকরা।
হংকং থেকে ভ্রমণে যাওয়া যাত্রী সংখ্যা হঠাৎ করেই কমে যাওয়ায় কিছু এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।
অথচ এবছর রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক জাপান সফর করেছে। গত এপ্রিলে মাসিক সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক জাপান ভ্রমণ করেছিল। এ সংখ্যা ছিল ৩৯ লাখ। তবে মে মাসে এ সংখ্যা কমে আসে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে হংকং থেকে জাপান ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কমে গেছে। চীন নিয়ন্ত্রত এই হংকংয়েই কমিক বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে গুজব রটেছে বেশি।
হংকং-ভিত্তিক ভ্রমণ সংস্থা ইজিএল ট্যুরসের কর্মকর্তা স্টিভ হিউয়েন বলেন, কমিক বইয়ে প্রলয়ের ভবিষ্যদ্বাণীকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
কমিক বইয়ের ওই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এক বিশাল ভূমিকম্প ও সুনামি জাপান ও এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে আঘাত হানবে।
হিউয়েন বলেন, “এমন গুজব আমাদের পর্যটন ব্যবসায় গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।” তার ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের জাপান ভ্রমণ করা পর্যটকের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
তবে মূল্যছাড় ও ভূমিকম্প বীমা চালুর ফলে জাপান ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা পুরোপুরি শূন্যে নেমে যায়নি, বলেন হিউয়েন।
হংকংয়ের এক বাসিন্দা বলেন, তিনি প্রায়ই জাপানে ভ্রমণ করেন। কিন্তু এবার জুলাই-অগাস্ট মাসে তিনি জাপান ভ্রমণে যেতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন কমিক বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে। সম্ভব হলে তিনি সেপ্টেম্বরের পরে জাপানে যেতে পারেন বলে জানান।
জাপানের কমিক বইটির নাম ‘দ্য ফিউচার আই স’। এর লেখক রিও তাতসুকি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। পরে ২০২১ সালে বইটি পুনরায় প্রকাশিত হয়।
রিও তার বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীকে ঘিরে গুজব প্রশমিত করার চেষ্টা করেছেন। প্রকাশকের মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে রিও বলেন, তিনি ‘ভবিষ্যদ্বক্তা নন।’
কমিক বইটির প্রথম সংস্করণে ২০১১ সালের মার্চে একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সেই মাসেই জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি ও পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
বইটির সর্বসাম্প্রতিক সংস্করণে আরেকটি বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণীকে অনেকেই এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, ২০২৫ সালের ৫ জুলাইয়ে বিশাল এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটবে। যদিও রিও তাতসুকি এমন দাবি অস্বীকার করেছেন।
প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’-এ অবস্থিত জাপান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রত্যন্ত তোকারা দ্বীপপুঞ্জে সম্প্রতি দুই সপ্তাহের মধ্যে ৯০০রও বেশি ভূমিকম্প হয়েছে।
এতে দ্বীপপুঞ্জটির উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা ঘুমহীন রাত কাটাচ্ছেন। যদিও ওই ভূমিকম্পগুলোর বেশিরভাগই ছিল ছোট মাত্রার কম্পন।
১৯৭১ সাল থেকে ভূমিকম্প বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে আসছেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট গেলার। তিনি বলেন, “বৈজ্ঞানিকভাবে ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। আমার গোটা বৈজ্ঞানিক পেশা জীবনে যত পূর্বাভাস দেখেছি, তার কোনওটাই আদৌ মেলেনি।”