প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: শনিবার , ৩ মে , ২০২৫
কাতার আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এমন সব অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে দিয়ে সজ্জিত যে, কেউ এটাকে বলেন উড়ন্ত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), আবার কারও কাছে এটা মুমূর্ষ রোগীদের লাইফ লাইন বা জীবন রেখা।
কাতারের রাজকীয় ওই বিশেষ উড়োজাহাজে সোমবার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। যেটাতে চড়ে জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুরোধে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে জানুয়ারিতে ব্যক্তিগত এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলেন কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি।
কেবল কাতারের আমিরের জন্য নয়, বিভিন্ন দেশের জটিল রোগীদের দীর্ঘ দূরত্বে স্থানান্তরের জন্য ব্যবহার হয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে সজ্জিত উড়োজাহাজটি।
কাতারের রাজপরিবারের মালিকানাধীন এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের বেশি দূরত্বে পরিবহনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।
এই উড়োজাহাজটি কাতারের ‘আমিরি ফ্লাইট’-এর মালিকানাধীন। প্রাইভেট এয়ারলাইন আমিরি ফ্লাইটে চড়েন কাতারের রাজ পরিবারের সদস্য এবং উচ্চ পর্যায়ের সরকারি ব্যক্তিরা।
চলুন দেখে নিই কি কি আছে বিশেষ এই উড়োজাহাজে>>
'উড়ন্ত আইসিইউ'
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলছেন, এ৩১৯ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের রয়েছে উন্নত চিকিৎসা সক্ষমতা। এটাকে ফ্লাইং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) হিসেবেও বর্ণনা করেন।
তিনি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, “এই উড়োজাহাজটি জরুরি অবস্থায় সর্বাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তিতে সজ্জিত, যা ট্রানজিটের সময় রোগীর নিরবচ্ছিন্ন যত্ন নিশ্চিত করে।”
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ৩১৯ মডেলের এই উড়োজাহাজে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প ও উন্নত কার্ডিয়াক মনিটর রয়েছে।
পাশাপাশি যেকোনো ধরনের জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ সংরক্ষণের জন্যেও এতে আলাদা জায়গা রয়েছে।
এই উড়োজাহাজে চিকিৎসা কর্মীদের নির্বিঘ্ন চলাচলের সুবিধা ছাড়াও জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে।
কেবল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য উড়োজাহাজটি ব্যবহার হচ্ছে এমন নয়। এর আগে ২০১৫ সালে চীন সফরে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া মাল্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ ভেল্লাকে উদ্ধার করে আনা হয়েছিল এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ডিজাইন
প্রথাগত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায়, এ৩১৯ এর প্রশস্ত কেবিনে চিকিৎসা কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে।
কাস্টমাইজড স্ট্রেচার, রোগীর ব্যক্তিগত জোন ও পরিবারের সদস্য বা বিশেষজ্ঞদের জন্য আলাদা আসনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনা করেন কাতারের রয়্যাল মেডিক্যাল ইউনিটের একটি চিকিৎসক দল, যেখানে চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তারা যাত্রার সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে শুরু করে ট্রমা পর্যন্ত জরুরি অবস্থাগুলি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে সক্ষম।
আরাম ও সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা
নির্মাতা এয়ারবাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ৩১৯ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উন্নত ক্লাইমেট কনট্রোল ব্যবস্থা ও শব্দনিরোধক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাত্রার সময় রোগীর আরাম নিশ্চিত করা হয়।
এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স থেকে চিকিৎসকরা বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ততক্ষণাৎ যোগাযোগ করতে পারেন।
এ ছাড়াও, চাপযুক্ত কেবিন অক্সিজেনের মাত্রা অনুকূল রাখে, যা শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মেডিকেল এভিয়েশনে নতুন যুগের সূচনা করেছে। এতে আর্থিকভাবে সামর্থবান গুরুতর অসুস্থ রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
এয়ারবাসের দাবি, উন্নত এভিয়েশন প্রযুক্তির সঙ্গে চিকিৎসা অভিজ্ঞতার সন্নিবেশ ঘটিয়ে এই উড়োজাহাজটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবার নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে। এটি নিশ্চিত করেছে, জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য কোনো দূরত্বই সক্ষমতার বাইরে নয়।
দীর্ঘ দূরত্বে ওড়ার সক্ষমতা
বেশি পরিমাণে জ্বালানি নিতে সক্ষম এ৩১৯ দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে, যা এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে রোগী পরিবহনের জন্য আদর্শ। ছোট রানওয়েতে এবং অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকাতেও অবতরণ করতে সক্ষম এই উড়োজাহাজ।