প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: মঙ্গলবার , ১৫ জুলাই , ২০২৫
২০২৫ সালের জুলাই মাস। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড শহরের এক জাহাজে পাওয়া গেল এমন এক বস্তু, যা প্রথম দেখাতেই যেন সায়েন্স ফিকশন সিনেমার দৃশ্য! জাহাজটির নাম ‘ব্লু হেরন’, আর পাওয়া যাওয়া বস্তুটির অস্থায়ী নাম দেয়া হয়েছে ShipGoo1—অর্থাৎ, শিপগু১।
একটি প্রপেলার শাফট মেরামতের জন্য জাহাজটি যখন লেক ইরি থেকে উঠিয়ে ক্লিভল্যান্ডের গ্রেট লেকস শিপইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনই বিষয়টির সূত্রপাত। জাহাজের ক্যাপ্টেন রুয়াল লি লক্ষ্য করেন, রাডার শাফটের ভেতর জমে থাকা একটি কালচে, টার বা আঠালো মতোন বস্তু, যা দেখতে অবিকল গলিত পিচের মতো।
সাধারণ বর্জ্য ভেবে ক্যাপ্টেন লি সেটিকে পানিতে ফেলে দেখেন তেল জাতীয় কোনো দাগ পড়ে কি না—কিন্তু না, কিছুই হলো না। এরপর একটি ব্লোটর্চ দিয়ে পুড়িয়ে দেখার চেষ্টা করেন—তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তখনই বিষয়টি রহস্যে মোড় নেয়।
মেরিন সুপারিনটেনডেন্ট ডগ রিকেটস ওই গূঢ় পদার্থ সংগ্রহ করে পাঠান মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডুলুথ ক্যাম্পাসে, যেখানে মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক কোডি শেখ এবং তার গবেষণা দল পদার্থটি পরীক্ষা করেন।
প্রথমে তাদের ধারণা ছিল, এটি পুরোনো কোনো গ্রিজ বা তেলজাতীয় পদার্থ। কিন্তু বিশ্লেষণ শুরু করতেই চমকে ওঠেন বিজ্ঞানীরা।
কোডি শেখ বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম এখানে কিছুই থাকবে না, কিন্তু এতে জীবনের উপস্থিতি ছিল—এবং সুসংরক্ষিত ডিএনএ-সহ।”
ডিএনএ বিশ্লেষণে জানা যায়, শিপগু১-এ যে জীবাণুটি আছে, তা আগে কখনো বৈজ্ঞানিকভাবে শনাক্ত হয়নি—অর্থাৎ এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি। এ জীবাণু সম্ভবত লেক ইরির পানিতে ভেসে থাকা জীবাণু, শৈবাল বা অন্যান্য জৈব পদার্থ থেকে তৈরি।
গবেষকরা অনুমান করছেন, এটি এককোষী জীব এবং সম্ভবত কার্বনভিত্তিক।
এ খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন রীতিমতো কাঁপছে। অনেকেই মজা করে বলছেন, এটি ‘Venom’ ছবির সিম্বিওট জীবের মতো। একজন টুইটার ব্যবহারকারী লেখেন, “একটা জীবন্ত কালো স্লাজ পেয়েছে বিজ্ঞানীরা... এখনও সময় আছে, পেছনে ফিরে যাই!”
অন্য একজন লিখেন, “২০২৫ সালে ক্লিভল্যান্ডে ভেনম দেখা যাবে, এটা কে ভেবেছিল!”
আরেকজন বলেন, “এটাই সেই জিনিস, যেটা দিয়ে হরর সিনেমা বানানো হয়—দেখতে দেখতে পুরো শহর গিলে খাবে!”
যদিও এটি নিয়ে অনেকে আতঙ্কিত, তবে অধ্যাপক কোডি শেখ এ আবিষ্কারে দারুণ উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের বিজ্ঞানে আনন্দ খুঁজি। শিপগু নামটি এক ধরনের মজা দিয়েই রাখা হয়েছে। সবখানে নতুনত্ব লুকিয়ে আছে, শুধু খুঁজে বের করতে হয়।”
বিজ্ঞান যতোই উন্নত হোক না কেন, প্রকৃতির রহস্য আজও মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়। শিপগু১ তারই এক নতুন উদাহরণ। এটি ভয়ংকর কিছু না, না কি ভবিষ্যতের চিকিৎসা-বিজ্ঞানে অনন্য আবিষ্কারের সূত্র, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা নিশ্চিত—শিপগু১ আমাদের ২০২৫ সালের সবচেয়ে চমকপ্রদ রহস্যগুলোর একটি।