প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: মঙ্গলবার , ১১ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫
ভারতের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের মাটিতে বসে বাংলাদেশের ভেতরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
পলাতক শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ বিশ্বাসের কারণে আওয়ামী লীগের অনুশোচনাহীন নেতাকর্মীরা দেশে অস্থিতিশীলতার নতুন চক্রান্তের সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত অপরাধের বিচার নিয়ে চলমান প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানাতে নিজ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আইন উপদেষ্টা। সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গটি আসে।
শেখ হাসিনা এখন দিল্লিতে ভারতের সরকারি আশ্রয়ে রয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তবে দিল্লিতে তার অবস্থান করা প্রসঙ্গে ভারতের পক্ষ থেকে খুব কমই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি থাকছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার এক অডিও ভাষণকে কেন্দ্র করে সারাদেশে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট্রের জাদুঘরসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত নেতাদের স্থাপনা গুড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।
সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই সরকারি উদ্যোগে সারাদেশে অরারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।
এই প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টার ভাষ্য হচ্ছে- ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিরোধী দল দমনে চালানো অভিযানগুলোর মতো এই অভিযানটি নয়। আওয়ামী লীগের উগ্র নেতাকর্মীদের দমন করে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে এটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
“খুব সতর্কতার সঙ্গে এই অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারের সময় কারও উপর যাতে নির্যাতন না করা হয় বা কেউ যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হন সেদিকে নজর রাখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি আওয়ামী লীগের সময়ের অভিযানগুলোর মতো নয়,” বলেন তিন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় ২০০ নেতা ও তৃণমূলের এক হাজার কর্মী ভারত বা কলকাতায় অবস্থান নিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রত্যার্পন করতে বলেছি। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার রেড এলার্ট জারি নিয়ে আমাদের তরফ থেকে যা করার সেটা করেছি। এখন ইন্টারপোল রেড এলার্ট জারি করেছে কিনা সেটার সুনিশ্চিত তথ্য নেই।
“বিচারকাল চলা অবস্থায় আদালত তাদেরকে হাজির করতে বললে সাথে সাথে ভারতের কাছে বন্দি প্রত্যার্পন চাওয়া হবে।”
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকার কতটা আশাবাদী এই প্রশ্নের উত্তরে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আইনে পলাতকের বিচারের বিধান রয়েছে। আমরা আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ভারতের মনোভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তারা নানান অযুজাতে এটাকে নাকচ করার চেষ্টা করবে। বরং তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে কুৎসামূলক, উস্কানিমূলক কথা বলতে দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির প্রচেষ্টা করছে এবং করবে। বন্দি প্রত্যার্পন চুক্তিটি সরল বিশ্বাসে প্রতিপালনের ইচ্ছা ভারতের রয়েছে বলে আমাদের মনে হয় না।”
পলাতক শেখ হাসিনার সমালোচনা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় যে ঔদ্ধত্ব নিয়ে কথা বলতেন গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঠিক একই টোনে কথা বলেছেন। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের যন্ত্রণার স্মৃতিগুলো নিয়ে তিনি পরিহাস করেছেন। এইআই দিয়ে আবু সাঈদের হত্যার দৃশ্য বানান হয়েছে বলে তিনি বলেছেন। এগুলো কি সহ্য করা যায়? সবাইকে উস্কানি দিয়েছেন প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন দিতে।
“আশ্চর্য লাগে আমার। আল্লাহ কি মানুষটার মধ্যে মিনিমাম অপরাধ বোধ দেয় নাই। যার মধ্যে মিমিমাম অপরাধ বোধ থাকে না উনি তো যেকোনো কিছু করতে পারেন। আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে উনার ওপর। তারাও একই টোনে কথা বলে। তারা দেশে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে এখন লিপ্ত। আরও বেশি লিপ্ত হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জানতে পেরেছে বিধায় অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করেছে। ৫ কিংবা ৮ অগাস্টের পরেও এই ধরনের অভিযানের চিন্তা করা হয়নি,” বলেন তিনি।