গবেষক, উদ্ভাবক ও বিজ্ঞানী হিসাবে দেশে পদে পদে অবমূল্যায়িত হওয়ার আক্ষেপ করলেন পঞ্চব্রীহি ধানের আবিষ্কারক ড. আবেদ চৌধুরী।
মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "আমাদের মন্ত্রণালয়ে দেখা করতে হয় সচিবদের সাথে, যার আমার কথা শুনে ঘুম আসে। শেষে চা বিস্কুট খাইয়ে বিদায় করে দেয়। নাগরিক হিসাবে প্রতিভাকে মূল্যায়ন করা হয় না। মন্ত্রীদের কাছে যেতে হলে পারিবারিক সম্পর্ক লাগে। অথচ আমি অস্ট্রেলিয়াতে থাকতে আগের দিন কল দিলে পরের দিন এমপি মন্ত্রীরা দেখা করার সুযোগ দেয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা) সাথে আমার কথা বলার জন্য ১৫ মিনিট সময় দরকার। সেটাও পাচ্ছি না।"
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে গ্লোবাল সাউথ স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (জিএসএসআরসি) আয়োজিত ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আবেদ চৌধুরী বলেন, আপনারা দেখে থাকবেন আমার পেটেন্টগুলো দেশের বাহিরে থেকে নিবন্ধিত। কিন্ত বাংলাদেশের সরকার আমাদের কোন সাহায্য করেনি অথচ এই গবেষণাটি করার জন্য আমার দেশের গ্রামের এলাকা বেছে নিয়েছি। যাতে আমার দেশ উপকৃত হয়। আমাদের দেশে কেউ ভালো কিছু করলে কেউ মূল্যায়ন করে না, কিন্তু এমআইটির পন্ডিতেরা বললে খুব মূল্যায়ন করে।
তিনি আরো বলেন, কবিতা যেমন শুধু বাংলা বিভাগে যারা পড়ে তাদের জন্য নির্দিষ্ট না।সবাই লিখতে পারে। তেমনি বিজ্ঞানকেও জনসাধারণপর হাতে তুলছ দিতে চাই। আমরা ডেমোক্রেটাইজেশন অব ইনোভেশনে পঞ্চব্রীহি ধান উদ্ভাবন করেছি, এখন অন্যান্য ফসল যেমন জোয়ান, তিসি, বেগুন, ঢেঁড়শ ইত্যাদি উদ্ভাবন করার চেষ্টা করছি, গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। গত বছর পিতৃহীন বীজ উদ্ভাবন করেছি। আমাদের এই উদ্ভাবন কার্বন ও মিথেন মিটিগেশনে অত্যান্ত সহায়ক।
সেমিনারের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ড. আবেদ চৌধুরীর এই উদ্ভাবনকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “কিভাবে সময়টাকে সংক্ষিপ্ত করে ভবিষ্যতে প্রোডাক্টিভ করা যায় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। ছোট বেলায় আমরা মূল থেকে গাছ গজাতে দেখেছি। কিন্তু সেগুলো থেকে ধান হতো না। বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর হাত ধরে সেইসব মূল থেকে ধান হওয়া বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। পঞ্চব্রীহি ধান দেশের খাদ্যশস্যের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. সাবিনা শারমিন বলেন, ধান কীভাবে বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে ওনার গবেষণা। আমরা তার মাধ্যমে উপকৃত হবো।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন,"আজকের প্রোগ্রাম ছিল মূলত বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীকে জানার। শীঘ্রই আমরা সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রোগ্রাম আয়োজন করব যেখানে ড. আবেদ চৌধুরী প্রধান বক্তা থাকবেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবেদ চৌধুরীর আবিষ্কার আছে।আমরা তার আবিষ্কার সম্পর্কে জানব।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ড. মো. আনিসুর রহমান এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক।