প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: মঙ্গলবার , ১২ আগস্ট , ২০২৫
নীল তিমির গান গাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মানুষের গান শোনার অভ্যাসের তুলনায় তিমির গান একেবারেই ভিন্ন—এতে থাকে দীর্ঘ গোঙানি, ক্লিক ও শিসধ্বনি, যা গরুর ডাক থেকে শুরু করে পাখির কিচিরমিচির পর্যন্ত শোনাতে পারে। এসব শব্দ এত শক্তিশালী যে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায় এবং একটানা আধঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে।
তিমির গান সঙ্গীতের জন্য নয়, বরং যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—মিলন ঋতুতে স্ত্রী ও পুরুষ তিমির মধ্যে, কিংবা অভিবাসনের সময় ঝাঁকের মধ্যে। গবেষকদের জন্য এসব জটিল শব্দ তিমির আচরণ বোঝার একটি জানালা, যদিও মানুষ এখনও পুরোপুরি এর অর্থ উন্মোচন করতে পারেনি। গান ও তার তীব্রতার পরিবর্তন খাবারের প্রাচুর্যের মতো তথ্যও জানাতে পারে।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি নির্দিষ্ট সময়গুলোতে গান গাওয়া বন্ধ করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি বে অ্যাকুয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নীল তিমি এই পরিবর্তনের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত দুইটি গবেষণায় একই প্রবণতা ধরা পড়েছে—নীল তিমি দীর্ঘ সময় গান কমিয়ে দিয়েছে।
প্রথম গবেষণা হয় ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের দ্বীপপুঞ্জের মধ্যবর্তী সাগরে। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির মেরিন ম্যামাল ইনস্টিটিউটের নেতৃত্বে এই গবেষণায় তিমির খাবার সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত "ডি-কল" এবং প্রজননকালীন “প্যাটার্নড সং” ট্র্যাক করা হয়।
বিজ্ঞানীরা পানির নিচে স্থাপিত হাইড্রোফোন যন্ত্র দিয়ে এসব শব্দ রেকর্ড করেন, যা হাজার কিলোমিটার দূরের শব্দও ধরতে সক্ষম।
তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে—যখন তিমিরা সাধারণত মোটা হয়—খাবার সংগ্রহসংক্রান্ত শব্দের ঘনত্ব ও তীব্রতা হ্রাস পায়, যা খাদ্যের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। এরপর প্রজননসংক্রান্ত গানও কমে যায়, যা প্রজনন কার্যক্রমের পতন নির্দেশ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই নীরবতা সমুদ্রজীবনের মৌলিক পরিবর্তনের সতর্ক সংকেত।