প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার , ১ মে , ২০২৫
সোভিয়েত রেড আর্মির সৈন্যরা ১৯৪৫সালের ৩০ এপ্রিল জার্মানির বার্লিন ঘিরে ফেলেছে। তখন তারা ক্রমেই এগিয়ে আসতে থাকে অ্যাডলফ হিটলারের বাংকারের দিকে। সেই সময় হিটলার নিজের শেষ আশ্রয়স্থল, নতুন তৈরি চ্যান্সেলর ভবনের পাশের বাংকারে আত্মহত্যা করেন।
ওই দিনের ঘটনাগুলো ঐতিহাসিকভাবে নথিভুক্ত থাকলেও বছরের পর বছর ধরে হিটলারে মৃত্যুকে ঘিরে রয়েছে অনেক মিথ এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্ব। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, হিটলার যুদ্ধের পরে বেঁচে ছিলেন এবং দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ অ্যান্টার্কটিকায় তার গোপন ঘাঁটিতে আশ্রয় নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
৮০ বছর বছর ধরে নানা জল্পনা-কল্পনা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ঘুরে বেড়ালেও এবার এ বিষয়ে নতুন তথ্য সামনে এনেছেন জার্মানির হামবুর্গ এপেনডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ক্লাউস পুশেল।
২০ মার্চ প্রকাশিত তার বই ‘দ্য টোড গেট উবের লাইশেন’–এ হিটলারের মৃত্যুর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন তিনি।
পুশেল লিখেছেন, “সায়ানাইড ক্যাপসুল মুখে দিয়ে কামড়ে ভেঙে খাওয়া এবং এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথায় গুলি করে যৌথ প্রক্রিয়ায় আত্মহত্যাই ছিল অ্যাডলফ হিটলারের মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ। হিটলার ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল তার বাংকারে আত্মহত্যা করেন। এর কিছু সময় পরেই সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনে হিটলারের বাংকারে এসে উপস্থিত হয়।
হামবুর্গ ইনস্টিটিউট অব ফরেনসিক মেডিসিনের সাবেক প্রধান ড. ক্লাউস পুশেল ১৯৯০ সালে মস্কোর সামরিক মহাফেজখানায় রক্ষিত হিটলারের মাথার খুলি ও রাশিয়ান ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার সুযোগ পান। সেই ভিত্তিতেই তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান, মৃতদেহটি হিটলারেরই ছিল, দাঁতের পরীক্ষার ফলাফলেও স্পষ্টভাবে সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অ্যাডলফ হিটলারের মৃত্যুর ৮০ বছর পর হামবুর্গের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হিটলারের মৃত্যু নিয়ে নানা মিথ ভেঙে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, যুদ্ধের শেষে হিটলারের মৃত্যুকে ঘিরে কয়েক দশক ধরে অনেক মিথ ছড়িয়েছিল, যেগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
পুশেল বলেন, “আমার ধারণা হলো, সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত বার্লিনে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি হলেও হিটলারের বাংকার থেকে প্রাপ্ত মৃতদেহগুলোর পরীক্ষা বেশ যত্নসহকারে এবং বোধগম্যভাবে সম্পন্ন করে নথিভুক্ত করা হয়েছিল।”
তবে পুশেলের কৌতূহলোদ্দীপক নিরীক্ষায় যে বিষয়গুলো নতুন করে এসেছে, এর একটি হলো হিটলারের একটি অণ্ডকোষ ছিল না। এই আবিষ্কারের দুটি ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। তা হলো, ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার আঘাতের কারণে অণ্ডকোষ বা ক্রিটোকিডিজম হারান। পরে ল্যান্ডসবার্গ কারাগারে তিনি যখন আটক ছিলেন, তখন কারাগারের একজন মেডিকেল অফিসার হিটলারের বাঁ অণ্ডকোষ না থাকার বিষয়টি নির্ণয় করেছিলেন।
এ ছাড়া হিটলারের মুখগহ্বরে কাচের টুকরা পাওয়া যায়। এটিই স্পষ্ট করে যে, তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইডের অ্যাম্পুল কামড়ে ছিলেন। এই পটাশিয়াম সায়ানাইডই কি প্রাণঘাতী ছিল, নাকি হিটলার খুব দ্রুত নিজের মাথায় গুলি করে মারা গিয়েছিলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। মাথার খুলির আঘাতের ওপর ভিত্তি করে ড. পুশেল অনুমান করেন যে, হিটলার মাথার ডান দিকে ৭.৬৫ মিমি ক্যালিবারের ভালথার পিস্তল দিয়ে নিজেকে গুলি করেছিলেন।
সায়ানাইড ক্যাপসুল মুখে কামড় দিয়ে চিবিয়ে খোলার পর পর্যন্ত তার হাতে দুই মিনিট পর্যন্ত সময় ছিল। সেই সময় তিনি তার মাথায় গুলি করেন।