আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: সোমবার , ২১ এপ্রিল , ২০২৫
রোমান ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষ আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস সোমবার মারা গেছেন। ৮৮ বছর বয়সি এই ধর্মগুরু গত ১২ বছর ধরে এই পদে ছিলেন।
পোপের মৃত্যুর পর ফিরে আসে শত শত বছর পুরোনো রীতি, নতুন পোপ নির্বাচনের ঐতিহাসিক আনুষ্ঠানিকতা।
পোপের কি কাজ?
ক্যাথলিক গীর্জার প্রধান পোপ। রোমান ক্যাথলিকরা বিশ্বাস করেন, যীশু খ্রিস্টের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
সেন্ট পিটারের জীবন্ত উত্তরসূরী হিসাবে বিবেচনা করা হয় তাকে। যীশু খ্রিস্টের প্রথম অনুসারীদের মধ্যে নেতা গোছের ছিলেন সেন্ট পিটার।
এমন উত্তরসূরী বিবেচনার কারণে ক্যাথলিক চার্চের উপর পূর্ণ এবং অবাধ ক্ষমতা পেয়ে থাকেন পোপ। এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রায় ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখেন।
যদিও জীবনাচরণ কেমন করতে হবে তার জন্য বাইবেলের শরণাপন্ন হন অনেক ক্যাথলিক, এর মধ্যেও বিশ্বাস ও চর্চাকে এগিয়ে নিতে পোপের দীক্ষা অনুসরণ করেন তারা।
পৃথিবীতে খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রায় অর্ধেক খ্রীস্টান। প্রোটেস্ট্যান্ট ও অর্থডক্স খ্রীস্টানরা পোপের কর্তৃত্ব স্বীকার করেন না।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটিতে থাকেন পোপ। যে দেশের অবস্থান ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরে। পোপ কোনো বেতন নেন না। তার ভ্রমণ ও জীবন-জীবিকার ব্যয় চালায় ভ্যাটিকান সিটি।
পোপের মৃত্যুর পর কী হয়
ঐতিহ্যগতভাবে পোপের শেষকৃত্যে বিশাল এক আনুষ্ঠানিকতা হয়ে তাকে। তবে, পোপ ফ্রান্সিস তার শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতায় জটিলতা কমিয়ে গেছেন।
আগের পোপদের একটার উপর একটা বসানো তিন কফিনে সমাহিত করা হত। যেগুলো তৈরি করা হত সাইপ্রেস, সীসা এবং ওক কাঠ দিয়ে। কেবল দস্তা দিয়ে আবৃত একটি সাধারণ কাঠের কফিনে সমাহিত হতে চেয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।
জনসাধারণের দেখার জন্য ‘ক্যাটাফাল্ক’ নামে পরিচিত সুউচ্চ মঞ্চে রাখা হত পোপদের মরদেহ। এভাবে ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় মরদেহ রাখার আয়োজন বাদ দিয়ে দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।
এর পরিবর্তে, মরদেহ কফিনে থাকাবস্থায় সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাবে মানুষ। তবে, কফিনে ঢাকনার একটা অংশ খোলা থাকবে।
ভ্যাটিকান সিটির বাইরে সমাহিত করা হবে পোপ ফ্রান্সিসকে। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এমন ঘটনা ঘটেনি।
ব্যাসিলিকা অব সেন্ট ম্যারি মেজর-এ সমাহিত করা হবে তাকে। এটি রোমে থাকা পোপের চারটি প্রধান ব্যাসিলিকার একটি।
ব্যাসিলিকা হচ্ছে এমন চার্চ, যেটাকে বিশেষ গুরুত্ব এবং সুযোগ-সুবিধা দেয় ভ্যাটিকান। মেজর ব্যাসিলিকার সঙ্গে বিশেষ সংযোগ থাকে পোপদের।
নতুন পোপ কারা নির্বাচন করেন?
সারাবিশ্বের ক্যাথলিক চার্চগুলোর উর্ধ্বতন ধর্মগুরু, কার্ডিনালরা পোপ নির্বাচন করে থাকেন। তাদের সকলে পুরুষ। বিশপদের মধ্য থেকে তাদেরকে সরাসরি নিয়োগ দেন পোপ।
বর্তমানে ২৫২ জন ক্যাথলিক কার্ডিনাল রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৩৮ জন নতুন পোপ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য।
৮০ বছর পার হয়ে যাওয়ায় বাকীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে, পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য কাকে বাছাই করা হবে, সেই বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন তারা।
নতুন পোপ নির্বাচন যেভাবে
কোনো পোপ মারা গেলে বা পদত্যাগ করলে কার্ডিনালদের ডাকা হয় ভ্যাটিকানে। এরপর কনক্লেভ বা গোপন মন্ত্রণাসভায় মিলিত হন তারা; যেটা নির্বাচন হিসাবে পরিচিত।
পোপের মৃত্যু এবং উত্তরসূরী নির্বাচনের মাঝের সময়ে চার্চ পরিচালনা করে থাকেন কলেজ অব কার্ডিনাল্স।
সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতরে অত্যন্ত গোপনে হয়ে থাকে এই নির্বাচন। যতক্ষণ না একজন বিজয়ী নির্বাচিত হন, ততক্ষণ নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে থাকেন কার্ডিনালরা। এমন প্রক্রিয়ায় সাধারণত কয়েকদিন সময় লাগে।
পূর্ববর্তী শতকগুলোতে এই ভোটগ্রহণ কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাস পার হয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। কনক্লেভ চলার মধ্যে কার্ডিনালের মৃত্যুর ঘটনাও আছে।
সিস্টিন চ্যাপেলে নির্বাচন কেমন চলছে, তা বুঝা যায় দিনে দুইবার। সেটাও এক অভিনব পন্থায়, ভেতরে কার্ডিনালদের পোড়ানো ব্যালট পেপারের ধোঁয়া দেখে।
কালো ধোঁয়া দেখার মানে হলো, সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ঐতিহ্যগতভাবে, সাদা ধোঁয়া দেখা যাওয়ার মানে, নতুন পোপ নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
কিভাবে প্রকাশ হয় নতুন পোপের নাম?
নতুন পোপ জনতার সামনেও আসেন ঐতিহ্যবাহী উপায়ে। সাধারণত, সাদা ধোঁয়া দেখা যাওয়ার ঘন্টাখানেক পরে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের পাশের বারান্দায় আসেন নতুন পোপ।
যে বারান্দা থেকে বিশেষ বিশেষ সময়ে দর্শনার্থীদের সামনে হাজির হন পোপরা। মৃত্যুর ঠিক আগের দিন রোববারই ইস্টার সানডে’র শুভেচ্ছা জানাতে ওই বারান্দায় এসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল ওই সময়ে ল্যাটিন ভাষায় ঘোষণা দেবেন, ‘হাবেমুস পাপাম’। যার অর্থ ‘আমরা একজন পোপ পেয়েছি’।
এরপর তিনি পোপ হিসাবে যে নাম বেছে নেবেন নতুন পোপ, সেই নামে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবেন। এটা পোপের আসল নাম হতেও পারে, নাও হতে পারে।
যেমন- আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত পোপ ফ্রান্সিসের আসল নাম হোর্হে মারিও বেরগোগ্লিও। সেন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসির প্রতি সম্মান জানিয়ে ফ্রান্সিস নাম নিয়েছিলেন তিনি।
পোপ হতে পারেন কে?
তত্ত্বগতভাবে, রোমান ক্যাথলিক হিসাবে ব্যাপটাইজড হয়েছেন, এমন যে কাউকে পোপ হিসাবে নির্বাচনের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে। বাস্তবে কার্ডিনালরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে এই পদে বেছে নেন।
২০১৩ সালে আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া পোপ ফ্রান্সিসকে যখন নির্বাচন করা হয়, তখন তিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকা থেকে আসা প্রথম পোপ। দক্ষিণ আমেরিকায় বিশ্বের প্রায় ২৮ শতাংশ ক্যাথলিকের বসবাস করেন।
ইতিহাস বলছে, ইউরোপীয়দের মধ্য থেকে পোপ বেছে নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন কার্ডিনালরা। বিশেষ করে, ইতালি থেকে।
এখন পর্যযন্ত নির্বাচিত ২৬৬ জন পোপের মধ্যে ২১৭ জনই ছিলেন ইতালির।