নরসিংদী প্রতিনিধি প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার , ১৩ মার্চ , ২০২৫
নরসিংদী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা থাকলেও টাকা ছাড়া প্রসবকালীন কোনো সেবা মেলে না। এমনকি, ডেলিভারি রোগীদের ক্ষেত্রে হাসপাতালের স্টাফদের নির্ধারিত কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া না হলে করা হয় অশোভন আচরণ।
এতে নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা নিতে আসা প্রসুতিসহ শত শত মা ও শিশু এবং তাদের স্বজনরা।
সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে সাধারণ প্রসূতি রোগীদের জিম্মি করে অবৈধভাবে টাকা আয়ের একটি চক্র গড়ে উঠেছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা লিছা বেগম। এ চক্রে অ্যাম্বুলেন্স চালক থেকে শুরু করে পিয়ন, নার্স ও আয়া জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বুধবার পরিদর্শিকা লিছা এক প্রসূতি মায়ের ডেলিভারি করিয়ে টাকা আদায় করেন। পরে সাংবাদিকরা তাকে ফোন করলে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিকটিমকে বিকাশের মাধ্যমে সে টাকা ফেরত দেন।
জানা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদীর হতদরিদ্র মো. মোবারকের স্ত্রী শাহিনুর আক্তারের বুধবার দুপুর ২টায় প্রসববেদনা উঠে। পরে শাহিনুরের কৃষক বাবা মো. তাজু মিয়া তাকে নিয়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় নরসিংদী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসেন। হাসপাতালে আসার ২০ মিনিটের মধ্যে শাহিনুরের নরমাল ডেলিভারি হয়। ডেলিভারি করান পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা লিছা বেগম। তাকে সহায়তা করেন আয়া ফরিদা।
ভিকটিম শাহিনুর আক্তার বলেন, নরমাল ডেলিভারি পর পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা লিছা বেগম তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। তার কৃষক বাবা এতো টাকা দিতে পারবেন না জানালেও তাদের নানা অযুহাতে হাসপাতালে আটকে রাখেন। পরে বাধ্য হয়ে চার হাজার দুইশ ৫০ টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
তিনি আরও বলেন, লিছা বেগম বৃহস্পতিবার দুপুরে ফোন করে টাকা নেওয়ার বিষয়ে ক্ষমা চান। ভবিষ্যতে করবেন না বলে জানান। এবং বিকাশের মাধ্যমে চার হাজার টাকা ফেরত দেন।
অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার সুমনের মাধ্যমে পরিদর্শিকা লিছা বেগম ভিকটিমের টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হাসপাতালের এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, শুধু শাহিনুর আক্তারই নন; পরিদর্শিকা লিছা বেগম যার ডেলিভারিই করান, তার কাছ থেকে টাকা নেন। লিছা ডেলিভারি প্রতি ৫-৭ হাজার টাকা দাবি করেন। পাঁচ হাজারের কমে কোনো রোগীকে ছাড়েন না।
এ বিষয়ে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা লিছা বেগম বুধবার টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে পুনরায় ফোন তিনি বলেন, ‘এটি ভুল বোঝাবুঝি, আমিতো মানুষ, আমার ভুল হয়েছে। বিষয়টি সমাধান হয়েছে।’
হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এডিসিসি ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, তিনি বিষয়টি খতিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের নরসিংদীর ডিডি শেখ শাহীদুজ্জামান বলেন, সরকারি সেবা প্রদান করে টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। কারও বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে আমি অসুস্থতার কারণে ছুটিতে রয়েছি।
বিষয়টি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এডিসিসি ডা. মঞ্জুরুল আলম দেখবেন।
নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. আমিরুল হক শামীম বলেন, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সব সময় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এখানে ডেলিভারি করিয়ে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের ডিডি দেখবেন। প্রয়োজনে জেলা সিভিল সার্জন হিসেবে আমিও খতিয়ে দেখবো। অভিযুক্ত যেই হোক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।