প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: শুক্রবার , ২৫ জুলাই , ২০২৫
ইতালির রাজধানী রোমের ইতিহাসে লুকিয়ে থাকা এক বিস্মৃত অধ্যায় শিগগিরই আলোর মুখ দেখতে চলেছে। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ক্যাপিটোলিন হিলের তলদেশে ছড়িয়ে রয়েছে একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গজাল, যেখানে গত শত বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের কোনো পদচিহ্ন পড়েনি।
এই সুড়ঙ্গজালটি ‘গ্রোত্তিনো দেল ক্যাম্পিদোলিও’, বা ক্যাপিটোলিন গুহা নামে পরিচিত। এটি বিস্তৃত হয়েছে প্রায় ৩,৯০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে, যার গহীন অংশ নেমে গেছে মাটি থেকে প্রায় ৯৮৫ ফুট গভীরে। এটি রোমান ফোরাম এবং দুই সহস্রাব্দ পুরোনো মারচেলো থিয়েটার-এর নিচে বিস্তার লাভ করেছে।
প্রত্নতত্ত্ববিদ এরসিলিয়া ডি’আমব্রোসিও জানান, মধ্যযুগে এই ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছিল শহরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের অংশ হিসেবে। তখন এগুলো ব্যবহৃত হতো বসতঘর, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও পানশালা হিসেবে। পরবর্তীতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমা হামলা থেকে রক্ষা পেতে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল এই গুহাগুলোতে।
তবে ১৯২০-এর দশকে ফ্যাসিস্ট শাসক বেনিতো মুসোলিনি এই সুড়ঙ্গপথগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পর থেকে এগুলো পড়ে ছিল উপেক্ষিত ও অন্ধকারে ডুবে।
বর্তমানে এই গুহাগুলোর সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সুড়ঙ্গজালের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী কাঠামো ও আধুনিক আলোকসজ্জা, যাতে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা নিরাপদে ভিতরের অজানা অঞ্চলগুলো অন্বেষণ করতে পারেন।
আপাতত কেবল গবেষকদের জন্য প্রবেশের অনুমতি থাকলেও, কর্তৃপক্ষ আশা করছে ২০২৬ সালের শেষ বা ২০২৭ সালের শুরুতে এটি সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে।
ডি’আমব্রোসিও বলেন, “এটি শুধুমাত্র প্রত্নতত্ত্ব চর্চার জায়গা নয়, বরং গুহাবিদ্যা ও ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। রোমে যারা চেনা গন্তব্যের বাইরে কিছু খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি এক রহস্যময় বিকল্প হতে পারে।”
এই প্রাচীন গুহাগুলোতে রয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে নির্মিত জুপিটার মন্দিরের মার্বেল ভিত্তিপ্রস্তর এবং বহু যুগের বিবর্তনে পাথরখনি, জলাধার, বসতবাড়ি ও ব্যবসায়িক স্থাপনায় রূপান্তরিত বিভিন্ন ধাপের চিহ্ন। এমনকি কথিত আছে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে জার্মান কবি গ্যেটে এই ভূগর্ভস্থ আশ্রয়েই খুঁজে পেয়েছিলেন তার ভালোবাসার গল্প।
রোমের উপরের স্তরে যেমন রয়েছে রাজনীতি, শিল্প আর সভ্যতার চিহ্ন, তেমনি নিচের স্তরেও জমে আছে আরেকটি জগতের নিঃশব্দ ইতিহাস—যা এখন আমাদের সামনে আবার উন্মোচিত হতে চলেছে।