প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: সোমবার , ১৪ জুলাই , ২০২৫
প্রকৃতির রহস্য আর মহাবিশ্বের বিস্ময় আমাদের সবসময়ই কৌতূহলী করে তোলে। তবে এবার সেই বিস্ময়ের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে একেবারে হাতের নাগালে—তাও আবার নিলামের মাধ্যমে! আগামী বুধবার (১৬ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিখ্যাত নিলাম প্রতিষ্ঠান সদবি’স-এর আয়োজনে উঠতে যাচ্ছে মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে বড় পাথরখণ্ড।
সাধারণ একটি পাথরের মতো দেখতে হলেও এর পরিচয়, গঠন এবং উৎস একে করে তুলেছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ও দুর্লভ প্রাকৃতিক বস্তুগুলোর একটি। এর আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ২০ থেকে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪ কোটি থেকে ৪৮ কোটি টাকা! ভাবতেই শিউরে উঠতে হয়—২৫ কেজির একটি পাথর, যার প্রতিকেজির মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা!
🪨 কোন পাথর এটি?
পাথরটির নাম এনডব্লিউএ ১৬৭৮৮। এটি আসলে একটি উল্কাপিণ্ড। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এক বিশাল গ্রহাণুর ধাক্কায় এই পাথরটি মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মহাশূন্য পেরিয়ে ১৪ কোটি মাইল পথ পাড়ি দিয়ে সাহারা মরুভূমিতে এসে পড়ে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে নাইজারে এক উল্কাপিণ্ড সংগ্রাহক এটি খুঁজে পান। এরপর গবেষণাগারে পাঠানো হলে নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি সত্যিই মঙ্গল গ্রহ থেকে আসা উল্কাপিণ্ড। এর গঠন, খনিজ উপাদান ও রঙ একে মঙ্গলের বিশেষ পরিচয় দেয়। পাথরটি লাল, বাদামি ও ধূসর বর্ণের—যা মঙ্গলের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য বহন করে।
🌍 পৃথিবীতে মঙ্গল ছুঁয়ে দেখার মতো আর কিছু নেই
পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া গেছে ৭৭ হাজারের বেশি উল্কাপিণ্ড, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৪০০টি মঙ্গলের বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। আর এই পাথরখণ্ডটি তার মধ্যে সবচেয়ে বড়। এতটাই বড় যে, এটি পৃথিবীতে পাওয়া মঙ্গলজাত উপকরণের প্রায় ৭ শতাংশ ধারণ করছে—একা একটি খণ্ডেই।
এই পাথরখণ্ডটি মঙ্গলের দ্বিতীয় বৃহত্তম খণ্ডটির চেয়ে ৭০ শতাংশ বড়, যা এটিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও মূল্যবান করে তুলেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাকাশ অনুরাগী ও ধনকুবের সংগ্রাহকদের কাছে।
🌌 কেন এত দাম?
প্রথমত, এটি একটি বিরল বস্তু—এমন পাথর হাতে পাওয়ার সুযোগ বিশ্বে কয়েকজন মানুষেরই হয়। দ্বিতীয়ত, এটি বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর তৃতীয়ত, এটি মহাশূন্য থেকে আসা এক বাস্তব স্মারক—যা পৃথিবীর বাইরে আরেকটি গ্রহের অস্তিত্বকে ছুঁয়ে এসেছে। এসব কারণেই এ পাথরখণ্ডের মূল্য আকাশচুম্বী।