প্রতিনিধি, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: বুধবার , ২২ জানুয়ারী , ২০২৫
এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতি ও অর্থ লেনদেন এড়াতে প্রয়োজনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর মাধ্যমে নিয়োগ ও এমপিভুক্তি একসঙ্গে সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে আর্থিক লেনেদেনের বড় অভিযোগ আসছে।
আগে শিক্ষাভবনে এমপিওভুক্তি দেওয়া হলেও এখন তা মাউশির নয়টি অঞ্চলে দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষাবিটের সাংবাদিকদের একমাত্র নিবন্ধিত সংগঠন ‘এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা নিয়ে কোনো সংষ্কার কমিশন গঠনের পরিকল্পনা এ মুহুর্তে সরকারের নেই। এই খাত এখন চরম বিশৃংখলা অবস্থায় আছে। আগে শিক্ষাখাতে সব বিশৃংখলা দূর করে দুর্নীতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর শিক্ষাখাতের বরেণ্যদের নিয়ে একটি ‘শিক্ষাখাতের উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
গুচ্ছে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনবার চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিতে কত টাকা ব্যয় হত; গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তারা কত টাকা আয় করছেন—এই দুটি বিষয়ের হিসাব নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে এই হিসাব নেওয়া হবে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জিএসটি) এবং প্রকৌশল গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম থেকে আয় হওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফের নেওয়া হবে। এজন্য ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরিসহ যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব নেওয়া হবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ ভর্তিতে থাকার আহবান জানানো হয়েছিল। তবে নানা অজুহাতে তারা বেরিয়ে গেছে। এ বছর আমাদের আর কিছু করার নেই। তবে আগামীতে যেন এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে সেই চেষ্টা করা হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা একটা দেশে নষ্ট হতে অনেক সময় লাগে। এটা একটা সাইকেল (চক্রাকার)। প্রাইমারি স্কুল খারাপ হলে, মাধ্যমিকেও খারাপ হবে। তারা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে তারাই তো আবার শিক্ষক হবে, পড়াবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা প্রথম খারাপ হয় ১৯৭২ সালে। বঙ্গবন্ধুর সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ইউসুফ আলী। তার একটা প্রচণ্ড ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। সেটা হলো- ভালো যে কলেজগুলো ছিল, নামকরা কলেজ যাকে বলে; বিএম কলেজ, ঢাকা কলেজ, মুরারীচাঁদ কলেজ, রাজশাহী কলেজ; প্রথমে এগুলোকে ইউনিভার্সিটি কলেজ বানিয়ে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, এরপর পলিটিক্যালি সব কলেজগুলোকে জাতীয়করণ করা হলো। জাতীয়করণ না করলেও ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে কলেজ গড়ে তোলা হলো, অনুমোদন নেওয়া হলো। এভাবে গড়ে উঠলো আজকের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি বেকার। উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টেকনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণ করে। আর আমাদের এখানে উল্টো।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি অন্যায্য করে তিনি বলেন, তারা প্রাথমিকের সমমান। অথচ প্রাথমিকে জাতীয়করণ করা হয়েছে কিন্তু ইবতেদায়ীকে বাইরে রাখা হয়েছে। ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন ১৫০০, প্রধান শিক্ষকের বেতন ৩০০০ টাকা মাত্র। তাদের সমস্যাটা জেনুইন, কিন্তু এই মুহূর্তে অনশন করে আমাদের বিব্রত করা ছাড়া আর কিছুই হবে না। এটি না করে বরং কি করে কি করা যায় সেই চিন্তা করতে আমাদের সময় দেন। অগ্রাধিকার অনুযায়ী আমরা যাতে কাজ শুরু করে দিতে পারি। আমরা শুরু করতে দিতে যায় যাতে পরবর্তী সরকার এসে বুঝে যে এরা আসলেই বঞ্চিত। এদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন।
মতবিনিময় সভায় ইরাবের সভাপতি ফারুক হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান সালমান, ইরাবের সাবেক সভাপতি সাব্বির নেওয়াজ, নিজামুল হক, শরীফুল আলম সুমনসহ সংগঠনটির নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।