আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: শনিবার , ১৯ এপ্রিল , ২০২৫
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর সাম্প্রতিক ধরপাকড় নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
আমেরিকার ইমগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএল) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সংগৃহীত ৩২৭টি ভিসা বাতিলের ঘটনায় অর্ধেকই ঘটেছে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে।
এআইএল-এর ‘দ্য স্কোপ অব ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশনস অ্যাগেইনস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ভারতীয়, ১৪ শতাংশ চীনা। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নামও এসেছে ওই প্রতিবেদনে।
২০ জানুয়ারি ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অন্তত ১ হাজার ৪৮৯ জন শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করেছে, যার মধ্যে অনেককে ফিলিস্তিন-পন্থী বিক্ষোভে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
গত চার মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই করছে, যার মধ্যে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সক্রিয়তার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে, অনেকে অভিযোগ করেছেন, এই নজরদারি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে করা হচ্ছে। যার ফলে কোনও ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না থেকেই বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ভুলভাবে চিহ্নিত করার ভয় থেকে যাচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও “ক্যাচ এন্ড রিভোক” কর্মসূচির ঘোষণা দেন, যার আওতায় শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের ফিলিস্তিন বা হামাসের প্রতি সমর্থন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) পরিচালিত ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (এসইভিআইএস)’ একটি পোর্টাল, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও বিনিময় কর্মসূচির অংশগ্রহণকারীদের ওপর নজরদারি চালানো হয়।
আইসিই-এর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এসইভিআইএস সিস্টেমে ৪ হাজার ৭৩৬ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশেরই ভিসা ছিল এফ-১ ক্যাটাগরির।
এদিকে, এআইএলএ ট্রাম্পের এই প্রশাসনিক পদক্ষেপকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, সরকারের এমন পদক্ষেপ বেশ কিছু আইনি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এবং এর জন্য আইনি লড়াইয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ‘অপশনাল প্রাক্টিক্যাল ট্রেনিং’ প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের ওপর, যাদের সংখ্যা বাতিল হওয়া ভিসার অর্ধেক। ওপিটি প্রোগ্রামে থাকা এফ-১ ভিসাধারী শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মাস কাজ করার অনুমতি পান। কিন্তু ভিসা বাতিল হওয়ায় তারা আর কাজ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
এদিকে, ভিসা বাতিলের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলো হলো— টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, মিশিগান ও অ্যারিজোনা।
অন্যদিকে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি এবং স্কুল কর্মকর্তাদের সঙ্গে চিঠিপত্রের পর্যালোচনায় এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মার্চের শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অন্তত ১ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বা আইনি অবস্থান বাতিল করা হয়েছে।
আইনি সহায়তা দেওয়া একাধিক সংস্থার আইনজীবীরা বলছেন, ভারত ও চীন থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও, বাতিলের ঘটনা শুধু নির্দিষ্ট একটি অঞ্চল বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এনডিটিভি লিখেছে, ভারত সরকার এ বিষয়ে অবগত রয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, “এফ-১ ভিসা সংক্রান্ত যে বিষয় নিয়ে আমাদের কিছু ভারতীয় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছেন, তা আমরা জানি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দূতাবাস ও কনস্যুলেট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।”