প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: মঙ্গলবার , ১৫ জুলাই , ২০২৫
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৩২ হাজার প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শিক্ষার মানোন্নয়নে এ নিয়োগকে জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যোগ্য, অভিজ্ঞ ও তরুণদের সমন্বয়ে একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে।
সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বৈঠকে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানতে চান, কোন স্কুলগুলো ভালো করছে এবং কীভাবে শিক্ষার মান আরও উন্নত করা যায়।
উপদেষ্টা ড. বিধান রঞ্জন রায় জানান, প্রাথমিক শিক্ষায় অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক ব্যয় হলেও কাঙ্ক্ষিত মান অর্জিত হয়নি। মূল্যায়নের মাধ্যমে স্কুলগুলোকে র্যাংকিং করা হচ্ছে এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “ভালো ফল করা স্কুলগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো সেখানে দক্ষ ও আন্তরিক প্রধান শিক্ষক আছেন। তাদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে একটি সহানুভূতিশীল ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা।”
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষা কাঠামোর প্রাণ হচ্ছে একজন যোগ্য প্রধান শিক্ষক। এ কারণে নিয়োগে গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। যারা বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তাদের প্রাধান্য দিতে হবে। একই সঙ্গে মেধাবী তরুণদেরও সুযোগ করে দিতে হবে।”
তিনি সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্নের নির্দেশ দেন।
বৈঠকে শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রেও স্বচ্ছ নীতিমালার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “এক উপজেলায় নিয়োগ পেয়ে পরে অন্য উপজেলায় বদলির জন্য সুপারিশ বা তদবির গ্রহণযোগ্য নয়। বদলির জন্য একটি স্পষ্ট ও নির্ধারিত প্রক্রিয়া থাকা দরকার, যা সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।”
স্কুলের পরিবেশকে নারীবান্ধব করতে ভবন নির্মাণ কমিটিতে নারী স্থপতিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন—সব ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রয়োজন ও সুবিধাকে গুরুত্ব দিতে হবে।”
তিনি দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ধাপে ধাপে ইন্টারনেট সংযোগ ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তার মতে, “শিশুদের আধুনিক ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক।”
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশনায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ইঙ্গিত মিলেছে। যোগ্য প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, স্বচ্ছ বদলি নীতিমালা, নারীবান্ধব পরিকাঠামো ও প্রযুক্তিনির্ভর শ্রেণিকক্ষ—এসবই একটি উন্নত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।