ক্যাম্পাস মিরর ডেস্ক প্রকাশিত: বুধবার , ১২ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫
ইউজিসি ও ইউনেস্কো’র যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রকল্পের পিআইসি সভা গতকাল (১১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রকল্পের কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার শিকার দেশের ২২টি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং শিক্ষায় তাদের পূর্ণ মনোনিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন- এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার, অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক, অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম, পরিচালক মোছা. জেসমিন পারভীন, অতিরিক্ত পরিচালক মুহম্মদ নাজমুল ইসলাম ও আকরাম আলী খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমান, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তাবাসসুম আমিনা, ছাত্র সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম ও উমামা ফাতেমা, ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম অফিসার রাজু দাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন যাচাই করে কাউন্সিলিং সেবা প্রদান করা এবং চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা ভয়ঙ্কর ট্রমার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ অবস্থা থেকে বের করে আনতে হলে কাউন্সিলিং সেবা অতীব জরুরী। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভালো রাখা এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করা গেলে এ সংকট দূর করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
অধ্যাপক মেহজাবিন হক বলেন, আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক চাপ তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। রংপুরে আবু সাঈদের মিছিল ও গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অনেকের মধ্যে মেন্টাল ডিজঅর্ডার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ট্রমা থেরাপিসহ তাদের যথাযথ ট্রিটমেন্ট সহায়তা দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থী হাত-পা, চোখ হারিয়েছে এবং অঙ্গহানী ঘটেছে। এসব শিক্ষার্থীরা তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই জনগোষ্ঠীর ট্রমা মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে বলে তিনি জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আন্দোলনের পরে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কিছু কাজ হয়েছিল। তবে, সরকারি সহায়তায় মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে তেমন কাজ হয়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা দেওয়া হলেও আন্দোলনের কিছু দিনের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ট্রমার বিষয়ে গুরুত্ব দেয় নি।
এজন্য তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জনান। এছাড়া, তিনি শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহেবিলিটেশন বিভাগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সেন্টার থেকে আহতদের সেবা দেওয়ার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ছাত্র সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিতে সম্ভব হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এসব প্রতিষ্ঠানের অগণিত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে তিনি জানান।