প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: শুক্রবার , ১ আগস্ট , ২০২৫
২০১১ সালের সায়েন্স ফিকশন সিনেমা ‘রিয়েল স্টিল’-এ রোবটদের বক্সিং লড়াই কল্পনা হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এবার সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিল চীন। বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হিউম্যানয়েড রোবটদের মধ্যে বক্সিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে দেশটি।
গত ২৫ মে চীনের হাংচৌ শহরে অনুষ্ঠিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড রোবট টুর্নামেন্ট–মেচা কমব্যাট এরিনা’। এটি আয়োজন করে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)। চীনের সরকারি টিভি চ্যানেল সিসিটিভি-১০ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এতে অংশ নেয় চারটি দল—কালো, গোলাপি, সবুজ ও লাল—প্রত্যেকেই নিজেদের তৈরি উন্নত রোবট নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ইউনিট্রি কোম্পানির তৈরি ‘জি১’ নামের হিউম্যানয়েড রোবটগুলো দেখতে অনেকটা মানুষের মতো। রোবটগুলো ঘুষি ও লাথি মারার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতেও সক্ষম। বক্সিং রিংয়ে এদের চলাফেরা ছিল অবাক করার মতোই নিখুঁত ও ভারসাম্যপূর্ণ।
প্রতিযোগিতায় প্রতিটি দলই ভিন্ন প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে রোবট নিয়ন্ত্রণ করেছে। সবুজ দলের নেতৃত্বে থাকা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হু ইউনকিয়ান রোবটের ধীর, নিয়ন্ত্রিত আঘাতের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার কৌশল গ্রহণ করেন। রোবটটি রিমোট কন্ট্রোলার বা গেম প্যাড দিয়ে পরিচালিত হয়, যা কম সময়ের মধ্যে নির্দেশ বাস্তবায়ন করে—ফলে প্রতিক্রিয়া দ্রুত পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, গোলাপি দলের নেতা জিয়াও তিয়ানকি ‘পেশি স্মৃতি নির্ভুলতা’ (Muscle Memory Precision) কৌশল ব্যবহার করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল দ্রুতগতির আক্রমণে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা।
জি১ রোবটটি এআই রিইনফোর্সমেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষিত। এই প্রযুক্তিতে রোবটকে বিপুল পরিমাণ তথ্য দিয়ে এমনভাবে ট্রেনিং দেওয়া হয়, যাতে রোবট নিজেই শিখতে পারে এবং ভারসাম্য বজায় রেখে সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা দেখাতে পারে।
এই রোবটের বাহুতে রয়েছে সাতটি ডিগ্রি-অব-ফ্রিডম সেন্সর, যা মানুষের হাতের মতো কাজ করতে পারে। রোবটটি ঘুষি দিতে কাঁধ, লাথি দিতে কোমর ও হাঁটু ব্যবহার করতে পারে। এমনকি ভারসাম্য হারানোর মতো পরিস্থিতিতেও রোবটটি নিজে নিজে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে—এটি করা সম্ভব হয়েছে রিয়েল-টাইম ব্যালেন্স সেন্সরের জন্য।
এই প্রতিযোগিতা প্রমাণ করে, প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন আর রোবটের যুদ্ধ শুধুই সিনেমার কল্পকাহিনি নয়। চীনের এই উদ্যোগ রোবট প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল, যেখানে যুদ্ধ, ক্রীড়া কিংবা নিরাপত্তা—সবক্ষেত্রেই রোবটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।