স্বাস্থ্য ডেস্ক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: শুক্রবার , ১১ জুলাই , ২০২৫
অনেকের কাছেই সর্দি-কাশি কিংবা নাক ঝরা বিরক্তিকর হলেও, শ্লেষ্মা বা স্নট আসলে আমাদের দেহের এক চমৎকার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
প্রাচীন গ্রিসে চিকিৎসক হিপোক্রেটিস মনে করতেন, শ্লেষ্মা ছিল চারটি দেহগত রসের একটি, যার ভারসাম্যই নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের স্বাস্থ্য ও মেজাজ। যদিও আজ তা ভুল প্রমাণিত, তবে শ্লেষ্মার গুরুত্ব এখনও অটুট–বরং আধুনিক গবেষণা বলছে, এই স্নট আমাদের রোগ প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা রাখে। খবর বিবিসি
প্রতিদিন আমাদের শরীরে গড়ে ১শ মিলিলিটার শ্লেষ্মা তৈরি হয়। এটি নাকের ভেতর আর্দ্রতা রক্ষা করে এবং ধুলো, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানকে আটকে দেয়।
শিশুরা তুলনামূলক বেশি ‘স্নুটি’ হয়, কারণ তাদের শরীর প্রথমবারের মতো বাইরের জীবাণুর সঙ্গে পরিচিত হয়।
শ্লেষ্মার রঙ ও ঘনত্ব দেখে বোঝা যায়, দেহের ভিতরে কী চলছে। স্বচ্ছ শ্লেষ্মা সাধারণত অ্যালার্জি বা ধুলাবালির প্রতিক্রিয়া, সাদা রঙ হলে ভাইরাসের উপস্থিতি, আর হলদেটে-সবুজ মানে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে। লালচে শ্লেষ্মা রক্তের উপস্থিতি বোঝায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, শ্লেষ্মার নিজস্ব এক ‘মাইক্রোবায়োম’ বা জীবাণু-বাস্তুতন্ত্র আছে, যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। বয়স, খাদ্যাভ্যাস, বাসস্থান এমনকি ধূমপানও এ মাইক্রোবায়োমকে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞানীরা এখন এই মাইক্রোবায়োম উন্নত করে নাকের স্প্রে তৈরি করছেন, যা ভবিষ্যতে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
সুইডেনে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মা অসুস্থদের নাকে প্রবেশ করিয়ে তাদের সাইনাসের উপসর্গ ৪০% পর্যন্ত কমানো গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভিটামিন-ডি স্প্রে দিয়ে ধূমপায়ীদের নাকের ঘ্রাণশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার গবেষণাও চলছে।
শুধু তাই নয়, শ্লেষ্মা বিশ্লেষণ করে কোভিড-১৯, হাঁপানি, এমনকি পারকিনসনের মতো জটিল রোগের আগাম পূর্বাভাসও পাওয়া সম্ভব। একে বলা হচ্ছে ‘ডায়াগ-নোজ’ – নাকের মাধ্যমেই রোগনির্ণয়।
অন্যদের অজান্তেই আমরা হয়তো শ্লেষ্মাকে ঘৃণা করি, কিন্তু এই স্নট-ই একদিন হতে পারে ব্যক্তিগত চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ।