প্রতিবেদক, ক্যাম্পাস মিরর প্রকাশিত: শনিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫
ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার ধাক্কা এসে লেগেছে বাংলাভাষী শিশুদের জনপ্রিয় শিক্ষামূলক মেগাজিন সিসিমপুরেও।
গত কয়েকবছর বইমেলার শিশুচত্বর মাতিয়ে রাখা সিসিমপুর এবার মেলায় নেই; টেলিভিশনে সিসিমপুর সম্প্রচার অব্যাহত থাকবে কিনা, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
শুক্রবার ছুটির দিনের সকাল মানেই বইমেলায় শিশুপ্রহর। আর সেখানে প্রতিবছরই দেখা মেলে- ইকরি, হালুম, টুকটুকি, শিকুদের। মজার মজার গল্পে আনন্দ ছড়ায় তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার বইমেলায় আসেনি ইকরি-হালুমরা। তাদের না পেয়ে শিশুদের পাশাপাশি অনেক অভিভাবকেরও মন খারাপ।
কেরানীগঞ্জ থেকে বাবার সঙ্গে শুক্রবার সকালে বইমেলায় এসেছিল নার্সারি শ্রেণিতে পড়ুয়া মেহরিন সাবা, শিশুচত্বরে এসেই জানতে পারল এবার নেই 'সিসিমপুর মঞ্চ'।
সাবার বাবা নাসিম আলম বলেন, "গতবারও তো মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছিলাম। সিসিমপুর মঞ্চের আয়োজনে খুব আনন্দ পেয়েছিল। এবার এখানে এসে জানলাম সিসিমপুর থাকবে না। এজন্য আমার মেয়ের খুব মন খারাপ হয়েছে।"
বাংলাদেশে সিসিমপুর পরিচালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতাসংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে। মার্কিন সরকারের ব্যয় কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন যেসব সংস্থাকে নিশানা করেছে, সেই তালিকায় ইউএসএআইডিও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয় কমানোর জন্য যারা কাজ করছে, সেই ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) নেতৃত্ব দিচ্ছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউএসএআইডি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ত্রাণ সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, যার বাজেটের বেশিরভাগ অংশ ব্যয় হয় স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে।
সংস্থাটির ১০ হাজার কর্মীর দুই-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিভিন্ন দেশে কাজ করে। ট্রাম্প বলছেন, ইউএসএআইডি মার্কিন জনগণের অর্থ ‘যথাযথভাবে’ ব্যবহার করতে পারছে না।
প্রাক-প্রাথমিক শিশু বিকাশ কার্যক্রমের আওতায় ২০০৫ সালে চালু হয় ‘সিসিমপুর’। ‘সর্বত্র শিশুরা হয়ে উঠুক আরও সম্পন্ন, আরও সবল এবং আরও সদয়’এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে তরা।
হালুম, টুকটুকি, ইকরি ও শিকুর সঙ্গে ২০২৩ সালে ১৫তম সিজনে যুক্ত হয় নতুন চরিত্র জুলিয়া। এটিও জনপ্রিয়তা পায়।
গত বছরের ডিসেম্বরে শিশুদের জন্য নতুন সিরিজ ঘোষণা করে সিসিমপুর। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ও প্রচলিত ৪০টি শিশুতোষ ছড়া নিয়ে সিসিমপুর তৈরি হয় ছড়ার সিরিজ। ছড়াগুলো শোনা যাচ্ছে- সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি ও শিকু চরিত্রের মুখ থেকে।
ইউএসএআইডি’র সিসিমপুর প্রকল্পের আওতায় শিশুদের জন্য শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে মানসম্মত এই ভিডিও কনটেন্টগুলো নির্মিত হয়।
নির্মিত ৪০টি ছড়ার অধিকাংশই প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের। ফলে শিশুরা তাদের পাঠ্যবইয়ের ছড়াগুলো আরও বেশি আগ্রহ এবং আনন্দের সঙ্গে শিখবে বলে আশা সিসিমপুরের।
এছাড়া পাঠ্যবইয়ের বাইরের জনপ্রিয় ও মজার ছড়াও আছে, যা শিশুদের সৃজনশীলতা ও মননশীলতার বিকাশে সহায়ক হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ফলে সিসিমপুরের ভবিষ্যৎ কী হবে, টেলিভিশনে সিসিমপুরের সম্প্রচার অব্যাহত থাকবে কিনা, এমন প্রশ্নও উঁকি দিচ্ছে।
সিসিমপুরের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ-এর কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজার পলাশ মাহবুব বলেন, “মার্কিন সরকারের তরফে ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত হয়, এমন সব কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী সাময়িকভাবে বন্ধ। আগামী তিন মাস ইউএসএআইডির সব কার্যক্রম রিভিউ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন সরকার।
“বাংলাদেশে সিসিমপুরের বেশিরভাগ কার্যক্রম পরিচালিত হয় ইউএসএআইডির সহায়তায়। ফলে নতুন যে সিদ্ধান্ত এসেছে, তার প্রভাব আমাদের সিসিমপুরের কার্যক্রমও পড়েছে। ফলে বইমেলায় সিসিমপুরের কিডস কর্নার কার্যক্রমটি এবার হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিসিমপুর ২০০৫ সাল থেকে টেলিভিশনে সম্প্রচার হয়। আর ইউএসএআইডির কার্যক্রমের ব্যাপারে যে নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে, সেটি চলমান প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সিসিমপুরের যেসব এপিসোড সম্প্রচার হচ্ছে, সেগুলো চলমান প্রকল্পের অংশ নয়, আগের নির্মিত অনুষ্ঠান।”
নতুন এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ কী ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে জানতে চাইলে পলাশ মাহবুব বলেন, “এ ব্যাপারে এখনই মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”